এম.জিয়াবুল হক, চকরিয়া :: সরকারি নির্দেশনার আলোকে মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমন মোকাবেলায় কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলা এবং পৌরসভা জনপদের ১৪৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দিনদিন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে অনলাইনে পাঠদান কার্যক্রম। পাশাপাশি উপজেলা শিক্ষা বিভাগের সঙ্গে প্রতিটি বিদ্যালয়ের শিক্ষক, এসএমসি অভিভাবক শিক্ষার্থীদের মাঝে সমন্বয়ে বাড়ছে জুম মিটিংয়ের অনুষ্ঠানমালা। কার্যক্রমটি চালু হওয়ায় যে কেউ ঘরে বসে কিংবা দুরস্থানে থেকেও বিদ্যালয়ের শিক্ষাক্রমসহ সার্বিক পরিস্থিতি জুম মিটিংয়ের বদৌলতে জানতে পারছে। উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা গুলশান আক্তার এর দিকনির্দেশনার আলোকে করোনাকালে প্রাথমিক বিদ্যালয় সমুহের শিক্ষাখাতের অগ্রগতি উন্নয়নে অনলাইন কার্যক্রমটি চকরিয়া উপজেলার সর্বমহলে প্রশংসিত হচ্ছে।
জানা গেছে, করোনা সংক্রমনের শুরুতে সারাদেশের মতো কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা এলাকায় প্রায় পাঁচমাস ধরে বন্ধ আছে সকল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। প্রথমদিকে সংক্রমণের ভয়ে শিক্ষক অভিভাবকদের মদো শিক্ষার্থীরাও বাড়ি থেকে বের হয়নি। এ অবস্থায় সংক্রমণের শুরুতে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগলেও বর্তমানে অনলাইনে পাঠদান কার্যক্রম চালু হওয়ায় স্বস্থির নি:শ^াস ফেলেছেন অভিভাবক মহল।
উপজেলা শিক্ষা অফিস সুত্রে জানা গেছে, করোনা সংক্রমনের ঝুঁিক কাটিয়ে জুলাই মাস থেকে চকরিয়া উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা গুলশান আক্তারের পরিকল্পনা ও নির্দেশনার আলোকে উপজেলার ১৮টি ইউনিয়ন এবং একটি পৌরসভা এলাকার ১৪৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া নিশ্চিতে চালু করা হয়েছে অনলাইন ক্লাস কার্যক্রম। আর এই কার্যক্রমটি সুচারুভাবে পরিচালনা নিশ্চিত করতে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা গঠন করেছেন একটি কমিটি। উল্লেখিত কমিটি প্রতিদিন ফেসবুক লাইভের মাধ্যমে ক্লাস্টার ভিত্তিক শিক্ষকদের সঙ্গে সমন্বয় সভা করে প্রতিটি বিদ্যালয়ের অনলাইন ক্লাস সচল রাখতে কাজ করে যাচ্ছেন।
চকরিয়া উপজেলা সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা মো.আনোয়ারুল কাদের বলেন, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা গুলশান আক্তারের নির্দেশনায় শিক্ষকদের সমন্বয়ে ইতোমধ্যে উপজেলার ১৪৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চালু করা হয়েছে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম। এখন বাড়িতে বসে বিভিন্ন বিষয়ে ক্লাস করছে শিক্ষার্থীরা। দিনদিন এই অনলাইন ক্লাসে অংশগ্রহণ বাড়ছে। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে নেওয়া এই সব অনলাইন ক্লাসের জন্য শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে কোনো অর্থ নেওয়া হয় না।
চকরিয়া উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা গুলশান আক্তার বলেন, উপজেলার ১৪৪টি বিদ্যালয়ে পাঠদান করেন ৯৯০ জন শিক্ষক। তাদের মধ্যে ৪২৮জন শিক্ষক শিক্ষিকা ইতোমধ্যে আইসিটি বিষয়ে বিশেষ প্রশিক্ষন নিয়েছেন। আমরা উল্লেখিত আইসিটি বিষয়ে বিশেষ প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত ৪২৮জন শিক্ষককে প্রতিটি বিদ্যালয়ে অনলাইন ক্লাসের কার্যক্রমে যুক্ত করেছি।
তিনি বলেন, প্রতিটি বিদ্যালয়ে অনলাইন ক্লাস নিশ্চিত করতে উপজেলার সকল আইসিটি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকদের একটি গ্রুপে যুক্ত করা হয়েছে। প্রতিটি ক্লাস্টারের আইসিটি প্যানেলভুক্ত শিক্ষকদের মধ্যে থেকে একজন হোস্ট হয়ে প্রতিসপ্তাহে ক্লাস্টারের আইসিটি প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষকদের নিয়ে জুম মিটিংয়ে অংশ নিচ্ছেন।
সর্বশেষ রোববার ২৩ আগস্ট করোনাকালে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের নিয়ে অনলাইন মিটিং করেছেন চকরিয়া পৌরসভার কাজিরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্তৃপক্ষ। এদিন অনলাইন মিটিংয়ের আলোচ্যসূচী ছিল ‘ঘরে বসে শিখি’ ও ‘কমিউনিটি রেডিও’ তে প্রচারিত প্রচারিত শিক্ষামূলক অনুষ্ঠান শোনার জন্য শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করা, বাড়িতে পাঠগ্রহনে সংযুক্ত থাকার জন্য অবহিতকরণ, শিক্ষকদের সঙ্গে ভার্চুয়াল সিস্টেমে যুক্ত হয়ে পাঠগ্রহন করতে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের আহবান। পাশাপাশি করোনাকালীন সময়ে সতর্কতা থেকে ও স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় উৎসাহ প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠিত অনলাইন মিটিংয়ে সভাপতিত্ব করেন বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির (এসএমসি) সভাপতি সাংবাদিক এম জিয়াবুল হক। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে দিকনির্দেশনামুলক বক্তব্য দেন প্রধান শিক্ষক জিএম রুকুনউদ্দিন, আলোচনায় অংশনেন সমাজ সেবক মোজাম্মেল হক, শিক্ষার্থীদের পাঠ কার্যক্রম নিয়ে আলোচনা করেন সহকারি শিক্ষক শাহরিয়ার আওরঙ্গজেব চৌধুরী তারেক, সহকারি শিক্ষক সুচিত্রা চৌধুরী, সহকারি শিক্ষক পারভীন আক্তার, সহকারি শিক্ষক জেসমিন আক্তার, সহকারি শিক্ষক মিশোরী জন্নাত মিশু, অভিভাবক সদস্য জন্নাতুল ফেরদৌস। এছাড়াও অনলাইন মিটিংয়ে যুক্ত ছিলেন বিদ্যালয়ের অভিভাবক এবং শিক্ষার্থীরা।
অপরদিকে সোমবার ২৪ আগস্ট চকরিয়া উপজেলার বড় ভেওলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়েছে অনলাইন ভিত্তিক জুম মিটিং। বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক দিলসাদ আঞ্জুমান রুমা জানিয়েছেন, এদিন পূর্ব নির্ধারিত সময় অনুযায়ী শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও এসএমসি সদস্যদের নিয়ে আয়োজিত জুম মিটিংয়ে চকরিয়া উপজেলার সম্মানিত শিক্ষা অফিসার গুলশান আক্তার এবং সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার মো.আনোয়ারুল কাদের যুক্ত হয়ে শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেছেন।
তিনি বলেন, জুম মিটিংয়ের মাধ্যমে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এসময় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে পড়ালেখার ব্যাপারে জানতে চান এবং সকল শিক্ষার্থীদের ধন্যবাদ জানান। একইসময়ে তাঁরা শিক্ষকদের সাথেও কথা বলে বর্তমান কার্যক্রম সম্পর্কে জেনে অনলাইনে “গণিত অলিম্পিয়াড কৌশলে গণিত শিখন” প্রশিক্ষণটি সম্পন্ন করার নির্দেশ দেন।
করোনা দুর্দিনে বিদ্যালয় বন্ধ থাকলেও অনলাইন মিটিংয়ের বদৌলতে শিক্ষার্থীরা উপজেলা শিক্ষা বিভাগের কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলতে পেরে অনেক খুশি। এইজন্য বিদ্যালয়ের পক্ষথেকে সম্মানিত দুই কর্মকর্তার প্রতি
কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন প্রধান শিক্ষক দিলসাদ আঞ্জুমান রুমা। ##
পাঠকের মতামত: